যোগাযোগ কাকে বলে?
এক বা একাধিক ব্যক্তির মধ্যে ভাবের আদান-প্রদান এর নামই হচ্ছে যোগাযোগ। এক্ষেত্রে যে বিষয়টি বিশেষভাবে লক্ষণীয় তা হচ্ছে শুধু বলা, শোনা, দেখা বা দেখানোতেই যোগাযোগ সম্পন্ন হয় না। যাকে বলা হল বা দেখানো হল তিনি কিছুই বুঝবেন না এবং বুঝে থাকলে তার মধ্যে ভাবের কোন পরিবর্তন হল কি না সেটি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তাই যে কোন যোগাযোগের ক্ষেত্রে যোগাযোগকারীর রয়েছে একটি মূখ্য ভূমিকা।
যোগাযোগের উপাদান
যোগাযোগের মূখ্য উপাদান হচ্ছে ৫টি
1. বক্তা (Sender) |
2. শ্রোতা (Receiver) |
3. বার্তা (Message) |
4. মাধ্যম (Media) |
5. প্রতিবার্তা (Feedback) |
বক্তা
একজন বক্তা সফল যোগাযোগকারী হতে পারবেন তখনই যখন তার মধ্যে নিম্নলিখিত বৈশিষ্ট্যসমূহ বিদ্যমান থাকবে। যেমন-
- ধীরে ধীরে এবং স্পষ্ট উচ্চারণে কথা বলার দক্ষতা
- একান্ত প্রয়োজন ছাড়া উচ্চস্বরে কথা না বলার অভ্যাস
- একই সঙ্গে কথা না বলে ধাপে ধাপে শ্রোতাকে বিষয়টি হৃদয়ঙ্গম করার সুযোগ দিতে পারা
- সংক্ষিপ্ত, বস্ত্তনিষ্ঠ এবং বিষয়ের সাথে প্রাসঙ্গিক কথা বলার দক্ষতা
- গুছিয়ে বক্তব্য উপস্থাপন এবং সুনির্দিষ্টভাবে কথা বলার দক্ষতা
- ধৈর্য্যধারণ করা।
যোগাযোগ স্থাপনের সময় বক্তা নির্দিষ্ট কোন বার্তা, নির্দিষ্ট কোন মাধ্যম ব্যবহার করে শ্রোতার কাছে উপস্থাপন করে থাকেন। এই উপস্থাপনার পর শ্রোতা যখন কোন প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন এবং এই প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করার সুবাদে যখন বক্তা ও শ্রোতার মধ্যে একটি ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক গড়ে ওঠে তখনই বলা যায় একটি যোগাযোগ চক্র স্থাপিত হল। এমন একটি প্রক্রিয়ায় বক্তা সব সময় বক্তার ভূমিকাই পালন করে না বরং পর্যায়ক্রমে শ্রোতার ভূমিকাও পালন করে। শ্রোতাও অনুরূপভাবে সময় সময় বক্তার ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়।
যোগাযোগের প্রকার
- একমুখি ও
- দ্বিমুখি
একমুখি যোগাযোগ
এ ধরণের যোগাযোগে বক্তা একাই শুধু বলেন, শ্রোতাকে কিছু বলার সুযোগ দেন না। এ ক্ষেত্রে বক্তার লক্ষই থাকে তার বক্তব্য পেশ করা। শ্রোতারা তা শুনলো কি শুনলো না, বুঝলো কি বুঝলো না সে দিকে বক্তার খুব কমই দৃষ্টি থাকে। বক্তৃতা মঞ্চ, কলেজ/বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাশ এর উদাহরণ।
দ্বিমুখি যোগাযোগ
এক্ষেত্রে বক্তা একটানা বক্তব্য পেশ না করে কিছু সময় পর পরই শ্রোতাদের কাছ থেকে ফিডব্যাক নিয়ে তারা কতটুকু বুঝলো এ ব্যাপারে নিশ্চিত হন। উপরোক্ত শ্রোতারা বিষয়টি সম্বন্ধে কী জানেন বা বোঝেন সে সম্পর্কে তাদের মতামত প্রকাশের সুযোগ দেন। এতে করে যোগাযোগ হয়ে উঠে অধিক ফলপ্রসূ। তাই দ্বিমুখী যোগাযোগই সবচেয়ে ফলপ্রসূ ও কার্যকর যোগাযোগ হিসেবে বিবেচিত হয়ে থাকে।
বার্তা (Message)
বার্তা হল তথ্য, ধারণা, সংবাদ, বক্তব্য যা প্রেরক-প্রাপকের কাছে পৌছায়।
বার্তার বৈশিষ্ট্য
· সরল ( Candid) |
· স্পষ্ট (Clear) |
· সম্পূর্ণ (Complete) |
· সংক্ষিপ্ত (Concise) |
· বাস্তব (Concrede) |
· সঠিক (Correct) |
· সৌজন্য (Courteous) |
বার্তার ধরণ
· সরাসরি (Direct) |
· পরোক্ষ (Indirect) |
· ইতিবাচক (Positive) |
· নেতিবাচক (Negative) |
· আবেগ প্রবণ (Emotional) |
যোগাযোগের জন্য মাধ্যম নির্বাচন
যোগাযোগের জন্য মাধ্যম নির্বাচন একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ। মাধ্যমের যথার্থতার উপর যোগাযোগের সফলতা এবং বিফলতা অনেকাংশে নির্ভর করে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যে, কোন নিরক্ষর জনগোষ্ঠীকে কোন বিষয়ে সচেতন করার কাজে যদি তাদের মধ্যে মূল্যবান তথ্য সমৃদ্ধ পুস্তিকা বা লিফলেট বিতরণ করা হয় তাহলে তাদের মধ্যে ঐ নির্দিষ্ট বিষয়ে চেতনাবোধের ভগ্নাংশও জাগ্রত হবে না। আবার উচ্চ শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর কাছে বার্তা পৌঁছানোর মাধ্যম হিসেবে শুধুমাত্র ছবি সম্বলিত পোস্টার ব্যবহার করলে তা কেবলমাত্র কৌতুক ও তাচ্ছিল্যের কারণ হবে। তাই মাধ্যম নির্বাচনের পূর্বে জেনে নিতে হবে যাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে তাদের জানার স্তর কী?
বাধা | অতিক্রমের উপায় |
বার্তার গঠন/আকৃতি o ভাষার ভিন্নতা o অসংগতিপূর্ণ ভাষার ব্যবহার o জটিল ধারণার প্রয়োগ o বার্তা প্রয়োগের ক্ষেত্রে স্থান, কাল ও পাত্র বিবেচনা না করা | o বার্তা গঠনে 7C বিবেচনা করা o সহজ সরল ভাষা ব্যবহার। প্রয়োজনে আঞ্চলিক ভাষা ব্যবহার o শব্দ প্রয়োগে সতর্কতা এবং সম্ভাব্য প্রচলিত শব্দের ব্যবহার o বিশেষণ, তুলনা ও উদাহরণের মাধ্যমে ধারণার বিকাশ ঘটানো। |
বার্তা উপস্থাপন o নীচু বা মৃদু স্বর o অস্পষ্ট শব্দ, দুর্বল ও দৃশ্যমান উপকরণ o বিকৃত বার্তা | o স্বরণ স্বরের ব্যবহার o স্পষ্ট বাচন ও সঠিক উচ্চারণ, স্পষ্ট ও দৃশ্যমান উপকরনের ব্যবহার o বার্তা বিকৃতির কারণগুলি সম্পর্কে সতর্ক থাকা এবং প্রতিবার্তা গ্রহণের মাধ্যমে বার্তার সঠিকতা নিশ্চিত করা। |
বার্তার যোগ্যতা o বার্তা আনন্দদায়ক না হলে o সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় দৃষ্টিকোন থেকে বার্তার অগ্রহণযোগ্যতা o জেন্ডার সংবেদনশীল বার্তা না হলে o বৈচিত্র্যহীন বার্তা হলে | o সহমর্মিতা ও নমনীয়তা প্রদর্শন o সকল সুবিধাগুলি বিবেচনা করে সময় ও স্থান নির্বাচন o ধৈর্য্যশীলতা প্রদর্শন |
বার্তা গ্রহীতার সমস্যা o একাগ্রতা/মনোযোগের অভাব o অতিরিক্ত ঠান্ডা/গরম/সময়/পরিশ্রান্ত/অতিরিক্ত কাজের চাপ o সম্পূর্ণ না শুনলে o না বুঝে মূল্যায়ন এবং মন্তব্য করে o নিজের অভিজ্ঞতার সাথে না মিললে পরিত্যাগ করে o ক্ষুধা, তৃষ্ণা | o সহমর্মিতা ও নমনীয়তা প্রদর্শন o সকল সুবিধাগুলি বিবেচনা করে সময় ও স্থান নির্বাচন o ধৈয্যশীলতা প্রদর্শন |
যোগাযোগকারীর ব্যর্থতা o যোগাযোগকারীর অসামঞ্জস্যপূর্ণ আচরণ o যোগাযোগকারীর অহংকারী মনোভাব o মাত্রাতিরিক্ত যোগাযোগ o যোগাযোগ করার প্রক্রিয়াকে অস্বীকার করা | o মার্জিত আচরণ প্রদর্শন o উদার ও উন্মুক্ত মনোভাবের প্রকাশ ঘটানো o পরিকল্পিত উপায়ে যোগাযোগ স্থাপন করা o অংশগ্রহণমূলক নিয়মনীতি অনুসরণ করা
|
সঠিক মাধ্যম ব্যবহার না করা o বার্তা অনুযায়ী মাধ্যম ব্যবহার না করা o যথেষ্ট প্রতিবার্তার ব্যবস্থা না থাকেল | o বড় বার্তা হলে লিখিতভাবে বা রেকর্ড করে পাঠানো o ফিডব্যাক বা প্রতিবার্তার ব্যবস্থা করা |
একজন যোগাযোগ কর্মীর গুনাবলীকে তিনভাগে ভাগ করা যায়। যেমন-
- জ্ঞানমূলক
- মনোভাবমূলক/দৃষ্টিভঙ্গিগত
- দক্ষতামূলক
- জ্ঞানমূলক
ক. যোগাযোগ প্রক্রিয়া ও কৌশল সম্পর্কে জ্ঞান
খ. জনগণকে উদ্বুদ্ধ করার কলা-কৌশল সম্পর্কে জ্ঞান
গ. বিষয় সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্য জানা
ঘ. পরিবেশ সম্পর্কে তথ্য জানা
ঙ. এলাকার আর্থ-সামাজিক অবস্থা জানা।
- মনোভাব/দৃষ্টিভঙ্গিগত
ক. বন্ধুভাবাপন্ন হওয়া
খ. দায়িতব সম্পর্কে সচেতন থাকা
গ. সামাজিক মূল্যবোধের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকা
ঘ. উদ্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর কাছে আস্থা অর্জনের চেষ্টা করা
ঙ. সহানুভূতিশীলতা প্রদর্শন করা
চ. জনগণের দৃষ্টিকোন থেকে সমস্যা বোঝা ও সমাধান খুঁজে দেখার চেষ্টা করা
ছ. নিজে চর্চা করার মানসিকতা
জ. মানুষের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকা।
- দক্ষতামূলক
ক. যোগাযোগ উপকরণ ও প্রদর্শণ ও বিশেষণ করার ক্ষমতা
খ. সভা পরিচালনার দক্ষতা
গ. উপকরণ তৈরীর ক্ষমতা
ঘ. উন্নয়নের পরিবেশ সৃষ্টির ক্ষমতা
ঙ. জনগণের সাথে একাতম হওয়ার ক্ষমতা
চ. বিষয়বস্ত্ত সঠিকভাবে ব্যাখ্যা করার ক্ষমতা।